জিয়া সাইবার ফোর্স ও কিছু কথাঃ

আওয়ামী রেজিমের খুব বড় একটি ভয় ছিল মানুষের বাক স্বাধীনতা, খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফ্যাসিবাদ কায়েমের জন্য এই মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা নামক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের মারণাস্ত্র গুলো কে ধ্বংস করে দেবার জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রেজিম মরিয়া তখন সামুব্লগ (সামহোয়্যার ইন ব্লগ) এবং ২০১২ সাল পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জাতীয়তাবাদী মতপ্রকাশের একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হিসাবে দাঁড়াতে থাকে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়া এবং বেড়ে ওঠায় এবং লেখালেখির প্রতি আগ্রহ থাকায় আমি শুরু করি লেখা। একসময় জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী অনলাইন গ্রুপ “জেড ফোর্স” এর পাবলিক গ্রুপে পোস্ট দেয়া শুরু করি। মাস্টারদা সূর্যসেন, দীপ্র হাসান নামক দুটি আইডির সাথে কিছু কথা বার্তা হত ইনবক্সে। এত বিশ্লেষণ বা এনালিটিকাল কোন লেখা তখন চিন্তা করিনা, জাস্ট মনোভাব টা প্রকাশ করতাম। কালের পরিক্রমায় বি এন পি মিডিয়া উইং নামের একটি গ্রুপ দেখি। চিন্তিত ফায়েজ ভাই, কাজী লোকমান নামের দুটি আইডির বেশ লেখালেখি চোখে পড়ে। ধীরে ধীরে জানি অনেক গুলো বিখ্যাত নাম, দেরিতে এই নামগুলো জানা আমার ই অযোগ্যতা হয়ত। জাতির নানা, এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো, ক্যাপ্টেন নিমো, জুল ভার্ণ, দাসত্ব, ইলোরা জামান, কাণ্ডারি অথর্ব, ওয়াহিদ উন নবী, লাঞ্ছিতা বাংলাদেশ, মেজর ডালিম সহ অনেকের নাম। এর পাশাপাশি নিজের খুব ভালো সম্পর্ক হয় মির্জা সাব, এম এ আজিজ রনি, আমি বিদ্রোহী এবং ব্ল্যাক ফাইটার নামক আইডির সাথে।
তখন আসলে সঠিক ব্যাক্তিগত পরিচয় বা তথ্য দেয়াটা আসলেই বোকামি ও নিজের বিপদ ডেকে আনার নামান্তর ই ছিল। মির্জা সাব, এম এ আজিজ রনি, আমি বিদ্রোহী এবং ব্ল্যাক ফাইটার নামক আইডির সাথে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক নিয়েই আমাদের একটি নতুন প্রেক্ষাপট শুরু হয়, এই প্রেক্ষাপটের পেছনে একটি ছোট অপ্রীতিকর ঘটনা থাকলেও সেটা উল্লেখ না করি। ৪ঠা মার্চ ২০১৫ আমরা সন্ধ্যার পর সবাই ই (মির্জা সাব, এম এ আজিজ রনি, আমি বিদ্রোহী এবং ব্ল্যাক ফাইটার) একমত হই যে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলা যায় এবং সেই আলাপ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর, ৫ মার্চ ২০১৫ আমার ফাইজাল খান (Faizal Khan) আইডি থেকে খোলা হয় একটি ফেসবুক গ্রুপ যার নাম ছিল “We Revolt”. তখন আমার আইডি টি ক্রিয়েটর এডমিন হিসাবেই থাকে এবং বাকি ৪ জন কো-ক্রিয়েটর হিসাবে আজও সকলেই জানে ।
বেশ কয়কজন উদ্যামী ও দলপাগল মানুষ যুক্ত হন খুব দ্রুতই যার মধ্যে রহস্যময়ী মুখোশ, বট তলার উকিল, বিদ্রোহী দাবানল, এমদাদ সাইফুল, ফ্রীডমবয় তিতাস, শফিক আরমান, ইউসুফ ডিজে হট, আশিক আদনান, জিঞ্জির আশিক, টিন টিন শাওন সহ অনেকেই। সম্ভবত ১৮ মার্চ সর্বসম্মত ক্রমে কয়েকটি নাম পর্যালোচনার মাধ্যমে ‘’জিয়া সাইবার ফোর্স’’ নাম নিয়েই অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন শুরু করা হয়। তখন পাবলিক গ্রুপ এর পাশাপাশি প্রথম পেজ খোলা হয়েছিল জিয়া সাইবার ফোর্স মিডিয়া সেল নামে। রহস্যময়ী মুখোশ, বট তলার উকিল এদুজনের পরিশ্রম ও কন্ট্রিবিউশন আজীবন ই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবো। ব্যারিস্টার পারভেজ ভাইকে তখন সভাপতি করে সংগঠনের কাজ বেশ ভালোভাবে শুরু করা হয়। দীপা হাশেম আপা, অনিক খান, জনাব শাহেদ চৌধুরী, চিন্তিত ফায়েজ ভাই, জুল আফরোজ মজুমদার , আলফাজ দেওয়ান, আহমেদ মুসা বেলাল, অভিক জামান, নাসির উদ্দিন শাওন সহ অনেকেই আসেন ২০১৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে পরিচালনা পরিষদে বা এডমিন প্যানেলে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দুদিন আগে বট তলার উকিল ও বিদ্রোহী দাবানল কোন একটি কাজে ঢাকা আসলে দেখা হয়েছিল কাকরাইল সংলগ্ন একটি মার্কেটের সামনে, বেশ প্রাণবন্ত আড্ডা দিয়েছিলাম। পরদিন পারভেজ ভাই এর সঙ্গে মহাখালী জাহাঙ্গীর গেইট সংলগ্ন ক্যাপ্টেন্স এ আমাদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করি ও পরদিন নির্বাচনের খবর সংগ্রহ ও প্রচারণার সকল দায়িত্ব বণ্টন করে নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নূর আলম বা রহস্যময়ী মুখোশ আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে প্রবাসে থেকেও।
সময়ের পরিক্রমায় কাজ এগিয়ে চলতে থাকে। পারভেজ ভাই একটি টকশো তে সংগঠনের নাম প্রচার করেন বেশ জোরালো ভাবেই এবং সংগঠনের সদস্য বা পাবলিক গ্রুপে মেম্বার বাড়ার কাজে বেশ চমৎকার একটি রেসপন্স পাই আমরা। যে কোন কারণেই হোক পারভেজ ভাই স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাস্ত হয়ে যাওয়ায় উনি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি। সকলের অনুরোধে আমাদের কে বেশ কিছু বিষয়ে সহযোগিতা করেন বি এন পি র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, তৎকালীন বাগেরহাট জেলা বি এন পি র সিঃ সহ সভাপতি ও ২০০৮ এ বাগেরহাট ১ আসনের বি এন পি মনোনীত প্রার্থী এডঃ শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু।
২০১৫ সালের শেষ দিকে, পাবলিক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৫১০০০। শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু সাহেবের সহযোগিতায় ত্থকালীন ১৪ দলের শরীক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ (প্রচণ্ড অসুস্থ থাকায় উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম) এবং বি এন পি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী জনাব শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাহেব এর সাথে প্রথমবার স্বাক্ষাত এর সুযোগ হয় অনলাইন গ্রুপ নিয়ে, কারণ উনি তখন এ বিষয়গুলো নিয়ে যারা কাজ করত তাদের কে উৎসাহ দিতেন এবং অনেক ভাবেই সহযোগিতা করতেন। আমি, অনিক এবং ইউসুফ জনাব শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আমাদের সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানাই এবং উনি কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং অনুমতি দিয়েছিলেন উনার সাথে যোগাযোগ করার। আমাদের অনুরোধে উনি বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বি এন পি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাবস্থা করে দিয়ে আমাদেরকে আজীবন কৃতজ্ঞতার বাধনে বাধেন।
আমি, অনিক ও ইউসুফ তিনজন দেশনেত্রীর সামনে, দেশনেত্রী স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন, বলেছিলেন দলের দুঃ সময়ে তোমরা এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা। দেশনেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে জীবনে প্রথমবার, অনুভূতি হয়ত কয়েকপাতা লিখলেও শেষ হবেনা। বিমুগ্ধ ভাবে শুনেছিলাম স্বল্প সময়ে স্পষ্ট কিছু কথা যার তাতপর্য অনেক বেশি। একটি ছবি তোলার সৌভাগ্য হয়েছিল উনার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে (আমাদের জন্য এটা অনেক অনেক বেশি পাওয়া)। ছবিটি সেদিন রাতে গ্রুপে পোষ্ট করেছিলেন জনাব শাহেদ চৌধুরী ভাই। গ্রুপের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণের কাছে আর অনেকগুণ বাড়ে।
জনাব ওয়াহিদ উন নবী ভাই সে সময় অনলাইনের অনেক কেই সংগঠিত করতেন ব্যাক্তি উদ্যোগে।উনি আমাদের এগিয়ে চলাকে খুবী এপ্রিশিয়েট করতেন। মনে আছে একবার আমার একটি পোষ্ট “ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু” দেখে ফোন করে খুব মোটিভেশন এবং বকা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন থামা যাবেনা, আসেন আড্ডা দেই, আলোচনা করি কিন্তু থামা যাবেনা।উনার বাসায় একটি নিমন্ত্রণে অনেকের সাথেই সামনা সামনি দেখা হয়। শহীদুল ইসলাম বাবুল ভাই, ইকবাল চৌধুরী ভাই, বীথিকা ভাবি, হুমায়ুন কবির ভাই, জাহিদ হাসান ভাই, মরহুম টুকু জামিল ভাই, কে এম নাজমুল ভাই, কে এম হারুন ভাই এর সাথে ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবে পরিচয় হয়।অসাধারণ অন্তরিকতা, আতিথিয়তা ও স্নেহের পরশ ছিল ওয়াহিদ উন নবী ভাই এর আচরণে। কে এম হারুন ভাইয়ের সাথে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। যথেষ্ট সাংগঠনিক প্রজ্ঞা থাকায় উনাকে আমন্ত্রণ জানাই ও উনি সসন্মানে গ্রহণ করেন।
অনলাইনে সমাধিক পরিচিত ক্যাপ্টেন নিমো, যে কোন কারণেই হোক উনার সাথে ইনবক্সে মেসেজ বিনিময় ও পরে মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান, অনেক কথোপকথন। প্রথম দেখা রাত ৮:৩০ এর দিকে আফতাব নগরে, ২০১৫ এর শেষ ভাগ বা ২০১৬ এর শুরুর দিক। অনলাইনের অনেকটা কিংবদন্তী পর্যায়ে ক্যাপ্টেন নিমো, ব্লগেও ছিলেন নষ্ট শয়তান, স্বত্যান্বেষী কিরীটী সহ অনেক নামেই। চমৎকার বললে ভুল ই হবে, অসাধারণ একটি স্টারটিং ভাইর সাথে, অনেক অলোচোনা। তবে নিমো ভাইর বাসায় ৩-৪ বার যাওয়া হয়েছে বিভিন্ন কাজে, উনার বই এর সংগ্রহ আসলেই ঈর্ষণীয়।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ৫ মার্চ সংগঠনের বর্ষপুর্তিতে আমরা হাসিনা সরকার এর বাংলাদেশ ব্যাংক এর রিজার্ভ চুরির প্রতিবাদে এবং জাতীয়তাবাদী অনলাইনের যারা নিবেদিত প্রাণ এরকম সকলের সন্মাননায় (যা পরবর্তী বছর গুলতেও চলমান ছিল ) আয়োজন করি একটি সেমিনার যেখানে বি এন পি র তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও পরবর্তীতে মহাসচিব জনাব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যার প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন। আমাদের ধারনায় ছিলনা মহাসচিব স্যার আসতে সন্মত হবেন তবে আমি অন্তত অবিচল ছিলাম ইনশাআল্লাহ স্যার ফিরিয়ে দেবেন না। এডঃ শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, ওয়াহিদ উন নবী ভাই ও কাজল রেহমান ভাইর একান্ত সহযোগিতায় মহাসচিব স্যারের বাসায় আমি, কে এম হারুন, আশিকুল ইসলাম, ইউসুফ, রায়হান, অনিক সহ বেশ কয়েকজন যাই স্যারকে আমাদের উদ্যোগের বিষয়ে জানাতে। মনে আছে এবং থাকবে, আমাদের সীমাহীন অবাক করে দিয়ে বি এন পি মহাসচিব নিজে দরজা খুলেছিলেন, নাস্তা করিয়েছিলেন, শুনেছিলেন এবং দিন তারিখ স্থান উনার পি এস ইউনুস ভাইকে লিখে রাখতে বলেছিলেন।
প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথি হিসাবে মরহুম প্রফেসর এমাজ উদ্দিন স্যার এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক জনাব শফিক রেহমান স্যার সহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অর্থ সম্পাদক আব্দুস সালাম সহ আরও অনেকে। তখন একটি সাইবার সংগঠনের বর্ষপুর্তির সেমিনারে অনেকেই সভাপতিত্ব করতে চান নি আবার আমি নিজেও বি এন পি মহাসচিব এর সামনে সংগঠনের প্রধান হয়েও সভাপতিত্ব করার মত ধৃষ্টতা দেখাইনি। এডঃ শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপুর সভাপতিত্বে সেই সেমিনার বি এন পি র মিডিয়া উইং এর জনাব শাইরুল কবির খান এর মাধ্যমে দেশের সকল মিডিয়ায় চলে যায় জিয়া সাইবার ফোর্স এর নাম। এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো, ক্যাপ্টেন নিমো, ইলোরা জামান, জাহিদ হাসান, ওয়াহিদ উন নবী, সাবিনা আহমেদ, নাসিমুল গনি খান, মরহুম টুকু জামিল, সহ অনেক কে ই প্রথম বার অনলাইনে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য সন্মাননা স্মারক দেয়া হয়।
এরপর ঢাকা প্রেস ক্লাবে বি এন পি র ভাইস চেয়রম্যান জনাব আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন ও মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদ-বীর বিক্রম,- বিশেষ অতিথি হিসাবে ও প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান স্যার প্রধান বক্তা হিসাবে ছিলেন। এই সেমিনার এর দু দিন পর শফিক রেহমান স্যারকে ফ্যাসিস্ট সরকার এর অবৈধ বাহিনী এরেস্ট করে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ওয়াহিদ উন নবী ভাই আমাদের সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক হন এবং যে কোন কারণেই হোক ক্যাপ্টেন নিমোকে দায়িত্ব নেবার কথা বলা হলেও অবশেষে সেটা হয়ে ওঠেনি।
আমরা সাংগঠনিক কাজের সর্বোচ্চ উৎসাহ পেয়েছিলাম বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বি এন পি চেয়ারপার্সন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অনলাইনের অনেকে একত্রে সাক্ষাত করার এবং দেশনেত্রী বলেছিলেন “ আমাদের মিডিয়ার মুখ ওরা বন্ধ করে দিয়েছ, আমাদের মিডিয়া নাই, তোমরাই আমাদের মিডিয়া।‘’ এই উক্তিটিই আমাদের জন্য আজীবন সর্বোচ্চ সনাম্ননা হয়ে থাকবে।
এরকম চলমান সফলতার পর আসে চূড়ান্ত আঘাত এর প্রথম পর্ব। মুজিবুর রহমান মঞ্জু নামক এক হ্যাকার এর মাধ্যমে কোন এক স্বার্থগত লিপ্সা চরিতার্থ করতে ব্যার্থ হয়ে আমাদের চমৎকার সহযোগী রহস্যময়ী মুখোশ গ্রুপ হ্যাক করিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবির উপর ফটোশপ করে এক্স রেটেড ছবি বসিয়ে র্যাপিড পোষ্ট দিতে থাকে।সীমাহীন নোংরামি করে দীপা হাশেম আপা এবং আমার ছবি নিয়ে। এই পুরো ঘটনায় এরকম একটি অসহায় মুহুর্তে তখন সংগঠন ছাড়েন কে এম হারুন ও আলফাজ দেওয়ান। পরে শুনেছি নুর আলম তাদের কে মিস গাইড করেছিল। তবে স্বীকার করি, এই পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে বের করে জগৎ শেঠ ওরফে সামির রায়হান ওরফে ব্ল্যাক ফাইটার ওরফে আব্দুল্লাহ রায়হান। ঘটনার প্রমাণ সহ বিভিন্ন স্থানে সাবমিট করা হয়েছিল ওয়াহিদ উন নবী ভাইর সহায়তায় এবং নূর আলম কে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। আবার শুরু হয় কার্যক্রম।
সাংগঠনিক কার্যক্রমের সফলতার সিড়ি বেয়ে এম হাসান সুমন , নাজিম উদ্দিন শিমুল, অপু মালিক, কে এম সবুজ, কে এম মাহবুব, হাসিবুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ মজনু, যুবায়ের তানভীর সিদ্দিকী, ইকবাল হোসেন, মেহেদী হাসান আল রাব্বী, রেজাউল করিম, জাবিন সাজ্জাদ, সবুজ পাশা, ডঃ এস এ এ শাফী, জনাব মাইনুল ইসলাম, মেহেদী হাসান (যুক্তরাজ্য প্রবাসী ) সহ অনেক অনেক মুখ।
সাঙ্গঠনিক কাজের ধারাবাহিকতায় সুন্দরবন এর পার্শ্ববর্তী রামপাল তাপ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি তে একটি সেমিনার যেখানে বি এন পি র মহাসচিব জনাব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যার প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন। এবং মুল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বি এন পি র ততকালীন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্পাদক জনাব এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো।
সাঙ্গঠনিক কাজের আরেকটি চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ছিল ঢাকা প্রেস ক্লাবে বি এন পি র স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব নজরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বি এন পি চেয়ারপার্সন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলা ও সাজানো রায়ের প্রতিবাদে সেমিনারে।
তেল গ্যাস সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জিয়া সাইবার ফোর্স আবারো প্রতিবাদ সেমিনার করে যেখানে বি এন পি র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। আমাদের এই সেমিনারে শাহেদ চৌধুরী ভাই এসেছিলেন প্রবাস থেকে এবং বক্তব্য দিয়েছিলেন। রাঙ্গুনিয়ার ছাত্রদল নেতা নুরু ভাই প্রোগ্রামে ছিলেন। কথা হয়েছিল অনেকক্ষণ এবং দেখা হবার কথা ছিল আবার। কিন্তু আর দেখা হয়নি। উনাকে হত্যা করা হয়েছিল হাত ও চোখ বেধে।
২০১৭ তে সুনামগঞ্জ তাহিরপুর ও ২০১৮ তে কুড়িগ্রামে জনাব ওয়াহিদ উন নবী ভাই এর সর্বাত্মক উদ্যোগে আমার (আমি চেয়ারম্যান) এবং সেই সময়কার কমিটির মহাসচিব কে এম হারুন ভাই এর তত্ত্বাবধায়নে যথাক্রমে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বহরে যুক্ত হয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া। যেখানে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন ওয়াহিদ উন নবী ভাই।

আমার চেয়ারম্যান হিসাবে শেষ প্রোগ্রাম ছিল ফরিদপুরে। অত্যান্ত প্রানবন্ত অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী পরিবার ও বি এন পি র ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এর প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিতি আমাদেরকে অনেক বেশি উৎসাহিত করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে জিয়া সাইবার ফোর্স এর প্রধান সমন্বয়কের মাধ্যমে জনাব এফ এল হারুন আমাদের সংগঠনে উপদেষ্টা হিসাবে আসেন।
২০১৮ সালের ৪ঠা অগাস্ট নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আমার নামে সাইবার সিকিউরিটি আইনের ৫৭ ধারায় পল্টন থানায় মামলা হয়। আমাকে হারুন ভাই এবং আশিকুল ইসলাম ফোনে ব্যাপারটা অবগত করার পর সংগঠনের সকলের পরামর্শ ক্রমে আমি আইডি ডি একটিভ করি। যেহেতু সামির রায়হান, আশিকুল ইসলাম আমার কলিগ ও ছিলেন তখন উনাদের মাধ্যমেই কিছুটা খোজ খবর নিতাম। দিন দিন অনলাইনের উপরে হাসিনার নির্যাতন বাড়তে থাকে, ক্যাপ্টেন নিমো, ওয়াসিম ইফতেখার, হুমায়ুন কবির, রাজন ব্যাপারী, আরজান ইভান সহ অনেকেই অগাস্টে ২০১৮ এর শেষ ভাগে গ্রেফতার হন, এবং আমি মামলা পরবর্তী দিন ই আত্মগোপনে যাই গ্রেফতার এড়াতে এবং সেটা আমাদের সাঙ্গঠনিক সিদ্ধন্ত ছিল। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ফিরে আসার পরিকল্পনা ছিলো।
কিন্তু জনাব কে এম হারুন ভাই – তৎকালীন মহাসচিব, জিয়া সাইবার ফোর্স হঠাত ই গুম হন মৎস্য ভবনের সামনে থেকে এবং প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর বিধ্বস্ত অবস্থায় রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় চোখে গামছা বাধা অবস্থায় পাওয়া যায়। উনি আমাকে জানিয়েছিলেন, উনাকে গুম করা হয়েছিল আমার বিস্তারিত জানার জন্য এবং আমাকে পেলে মেরে ফেলার সম্ভবনা প্রবল। এ অবস্থায় আমার প্রকাশ্যে আসা আত্মহত্যার সামিল। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এর পর আমার এত সাহস হয়ে ওঠেনি জীবন বিপন্ন করে, যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি তাদের কে বিপদে ফেলে, যারা এই জিয়া সাইবার ফোর্স এ আমার সাথে ছিলেন তাদের কে বিপদে বিপন্ন করে অনলাইনে ফিরে আসার। আমার সন্তানের তখন মাত্র ৪ বছর বয়স। পারিবারিক দায়বদ্ধতাও আছে। সুতরাং আমি সংগঠনের কার্যক্রম থেকে দুরে ছিলাম জান বাঁচানোর তাগিদেই। এই ঘটনায় যদি সামান্য কোন মিথ্যা থাকে তাহলে ভিন্ন কোন গল্প থাকতে পারে যেটা আমার জানার বাইরে।
তবে কিছুদিন পরেই অর্থাৎ ২০১৯ এ গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক জনাব ওয়াহিদ উন নবী ভাইকে ১ ডজন মামলা, কে এম হারুন ভাইকে ৫ টি মামলা, আরাফাত মালিক অপুকে ৪ টি মামলা সহ অনেক কি গ্রেফতার করে অমানবিক ও পাশবিক নির্যাতন চালায় শেখ হাসিনার অনুগত বাহিনী।
উনারা মুক্ত হবার পর জুল আফরোজ মজুমদার চেয়ারম্যান, কে এম হারুন- মহাসচিব ও সবুজ পাশা- সাংগঠনিক দায়িত্ব নেন এবং জনাব ওয়াহিদ উন নবী ভাই ২০১৬ থেকেই প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। ২০২০ সালে মতানৈক্য না হওয়ায় সংগঠনে বিভাজনের একপর্যায়ে আমার কাছে মতামত চান অনেকেই। প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবাদ এড়াতে আমি সাংগঠিক কার্যক্রম কে স্থগিত করে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং এ বিষয়ে আমি জুল আফরোজ মজুমদার কে এম হারুন ও শফিক আরমান কে অবগত করি সামির রায়হান ও আশিকুল ইসলামের মাধ্যমে।
যাইহোক বিভাজন এড়ানো যায়নি এটাই সত্য। এটাও সত্য কে এম হারুন সংগঠনের একটি অংশ কে নিয়ে কার্যক্রম চালু রাখেন এবং ওয়াহিদ উন নবী ভাই, তৎকালীন চেয়ারম্যান জনাব জুল আফরোজ মজুমদার, সহ প্রতিষ্ঠাতা এম এ আজিজ রনি, কাওসার মাহমুদ রাইয়ান, তৎকালীন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শফিক আরমান, তালুকদার তিতাস, আশিক আদনান সহ অনেকেই শুধুমাত্র অনলাইনের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ ছিলেন।
এই বিভাজন এড়াতে দু তিন বার আমরা উদ্যোগ নিয়ে জনাব কে এম হারুন এর সঙ্গে এবং এফ এল হারুনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধান না পেয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে কে এম হারুন সাহেব দের যে অংশ টি সেখানের অভিভাবক ও বি এন পি নেতা জনাব শহীদুল ইসলাম বাবুল ভাইকেও অবগত করি। সংগত কারণেই জনাব শহীদুল ইসলাম বাবুল ভাই ২০১৬ সাল থেকে আমাদের কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখেছেন এবং এই ভরসা থেকেই আমি তার দ্বারস্থ হই। এমন কি ৫ অগাস্ট ২০২৪ পরবর্তী তে ও কে এম হারুনের সাথে আমার কথা হয়েও আসলে কোন যৌক্তিক সমাধান আসেনি।
যাইহোক লিখতে গেলে শেষ হবেনা, অনেক কথাই লেখা হয়নি, হয়ত লিখবো ও না। হয়ত লিখবোও না।সাংগঠনিক কাজের সকল সফলতাই সন্মিলিত অন্তত ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। একক ভাবে দাবী সম্ভব না বা কেউ এ কাজ করে আশা করি নিজেকে বা সংগঠন কে ছোট করবেন না।
আমি এবং কে এম হারুন একি কমিটি তে চেয়ারম্যান, মহাসচিব হিসাবে কাজ করেছি এবং ছুটে বেড়িয়েছি নানা প্রান্তরে ক্লান্তিহীন ভাবে। সাথে অনেকে ছিলেন। আমি কারো অংশগ্রহণ কেই খাটো করবো না এবং আমার অবস্থান, শিক্ষা, নৈতিকতা এবং বিবেক এটাতে সম্মতি দেয়না। নোংরামি করে নিজেদের সহযোদ্ধাদের কে খাটো করা বা নিজেকে ছোট করার মধ্যেও যাবনা।
এর প্রতিটি লাইন শতভাগ সত্য। কারো যদি এ বিষয়ে নুন্যতম চ্যালেঞ্জ বা কিছু বলার থাকে আমার ওয়ালে শালীন ভাবে কথা বলতে আসবেন জবাব পাবেন। কোন প্রকার নোংরামির জবাব দেয়া হবেনা এবং ব্লক করা হবে।
ধন্যবাদ